![]()  | 
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন আলোচিত এই হত্যা মামলা তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সম্প্রতি মোহাম্মদ সোহায়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করেন।
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল গ্রেপ্তার হন।
এর আগে, ১৬ জানুয়ারি সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এ ছাড়া, পশ্চিম রাজাবাজারে সাগর–রুনি যেই বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুলকে আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। একই বাসার অপর নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পালকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে চার সদস্যের টাস্কফোর্স।
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, আবু সাঈদ, মিন্টু, কামরুল হাসান (অরুণ), সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান।
তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাঁদের সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে মুক্ত আছেন, আর মিন্টু এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন, আর রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছিল, কিন্তু চার দিন পর তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি, এরপর আদালত র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তখন থেকে র্যাব মামলাটি তদন্ত করছিল, কিন্তু ১৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। র্যাবের তদন্তকালে প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানো হয় ১১২ বার। দীর্ঘ সময় পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তারা।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৪ নভেম্বর র্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র পিবিআই গ্রহণ করেছে।
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ র্যাব ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মাহিরের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব আরও জানিয়েছিল, ঘটনার স্থান থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। ডিএনএ প্রতিবেদনে অজ্ঞাত দুই পুরুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়, যাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
টাস্কফোর্সের প্রধান ও পিবিআইয়ের প্রধান মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, "খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।" তিনি আরও জানান, "তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছে।

0 Comments